অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : জনবল সংকটে ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা। চাহিদার তুলনায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবলের সংকট দীর্ঘদিনের। হাসাপাতালটিতে গড়ে নিয়মিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ শতাধিক।
ফলে সীমিত শয্যার কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া বরাদ্দ কম থাকায় ওষুধ সংকট রয়েছে জেলার বৃহত্তর চিকিৎসা সেবাদানকারী হাসপাতালটি।
সূত্রে জানা গেছে, ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০ লাখের বেশি। সদর উপজেলা ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলায় রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল৷ ফলে জটিল বা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় জেলাবাসীর একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি৷
হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চাহিদার তুলনায় হাসপাতালটিতে ৪১ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। চিকিৎসক পদে শূন্য রয়েছে ২৩টি পদ। এ ছাড়া সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ১৩টি, মিডওয়াইফ পদে ৬টি, স্টাফ নার্স পদে ২টি এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্ট পদে ১টি সহ এসব পদে মোট ২৩টি শূন্যপদ রয়েছে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স সহ বিভিন্ন পদে ২৬৮ টি পদের চাহিদা দেয়া হলেও ১৯১টি পদ পূরণ করেছে সরকার। বাকি ৭৭টি পদে কোনো জনবল নেই।
এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির সহায়ক জনবল সংকটেও ভুগছে হাসপাতালটি। তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারীদের ২২টি পদ শূণ্য রয়েছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুকিছু কাজ করা হলেও প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় ভোগান্তি কমছে না।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বর্তমান অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী কম আছে। অর্গানোগ্রাম ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী যে জনবল থাকার কথা, সেটিও নেই। প্রতিমাসে এই হাসপাতাল থেকে জেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ আউটডোরে সেবা নিয়ে থাকেন৷ গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাপাতাল হলেও রোগীর চাপ বেশি থাকায় নিয়মিত ভাবে হাসপাতালটিতে ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন৷ ফলে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে আউটডোর ও ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালটির ৮ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন চালু হলেও জটিলতা যেন পিছু ছাড়ছে না। নতুন ভবনের দুটি লিফট মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। এর আগে অসংখ্য বার লিফট দুটি বিকল হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিফট সংস্কার করলেও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি লিফটের সেবায়। ফলে লিফট ব্যবহার নিয়ে রোগীদের মাঝেও রয়েছে আতঙ্ক। কারণ, এর আগে বেশ কয়েকবার লিফট ছিঁড়ে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের। তিনি বাসস’কে বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও হাসপাতালটিতে নিয়মিত ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এত রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি জানান, নভেম্বর মাসে এই হাসপাতাল থেকে আউটডোরে স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে শিশু, মহিলা, সিজারিয়ান ও প্রসূতি, ডায়রিয়া এবং সার্জারি রোগী রয়েছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাপাসহাটিয়া গ্রামের রাসেল আহমেদ বলেন, আউটডোরে রোগীর চাপ অনেক৷ রোগী বেশি হওয়ায় চিকিৎসকরা চাইলেও বেশি সময় নিয়ে রোগী দেখতে পারেন না। এছাড়া চিকিৎসকরা যে ওষুধ লেখেন, তার সব ওষুধ হাসাপাতাল থেকে পাওয়া যায় না। নলডাঙা ইউনিয়ন থেকে আসা রোগী মালতি রানী বলেন, ভর্তি হয়ে বেড পাওয়া যায় না। রোগী অনেক, যে কারণে মেঝেতে কাঁথা পাটি বিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত বেড থাকলে রোগীদের ভোগান্তি কমবে।
সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া থেকে আসা ঝন্টু মিয়া বলেন, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা আগের চেয়ে ভালো। কিন্তু টয়লেট ও বাথরুমগুলোর পরিবেশ আগের মতোই নোংরা৷
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাসস’কে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান। এ ছাড়া ওষুধ ক্রয় ও বিতরণে আগে যেসব অনিয়ম বা গতানুগতিক পদ্ধতি ছিল, আমি সেগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল সংকট কমে গেলে সেবা বাড়ানো যাবে। তারপরও চিকিৎসক, নার্স সহ সকলেই আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, মানুষ যাতে সেবা পায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। হাসপাতালে যেন রোগীদের কোনো ভোগান্তি না থাকে, দালালদের দৌরাত্ম না থাকে, সেসব বিষয়ে হার্ডলাইনে কাজ করছি। আমাদের শয্যা সংখ্যা সীমিত। ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য শয্যা সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাসস’কে বলেন, একটি ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য যত সংখ্যক জনবল থাকার দরকার, এই হাসপাতালে সেটি নেই। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, বিগত দিনে দেশের প্রতিটি খাতে একটি অস্বচ্ছ সিস্টেম ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই সিস্টেম দূর করে সবকিছু ঢেলে সাঁজানোর চেষ্টা করছি। ওষুধ বন্টন, পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা, পেশাদারিত্বের নিশ্চয়তা তৈরিতে সকলের প্রচেষ্টা রয়েছে। জনবল সংকট ঠিক করা গেলে চিকিৎসা সেবা আরও সহজ ও উন্নত হবে।
Leave a Reply